গল্প: হাড়ভাঙা চাষার স্বপ্ন


সুদূর গ্রামের নাম ছিল সোনাপুর। গ্রামের মাঝখানে ছিল একটা বড় বটগাছ, যেটাকে সবাই বলত 'গাঁয়ের প্রাণ'। গ্রামের মানুষরা ছিল সহজ-সরল, পরিশ্রমী। তাদের দিন কাটতো সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে গিয়ে, আর ফেরা হতো সন্ধ্যার আধারে।

সোনাপুরে থাকত একজন চাষা – নাম রফিক চাচা। বয়স পঁচিশ পেরোলেও মুখে ছিল বয়সের ছাপ। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, কাঁদায় লুটিয়ে ফসল ফলাত সে। জমি ছিল মাত্র তিন বিঘা, কিন্তু স্বপ্ন ছিল আকাশছোঁয়া। সে বলত,
"একদিন এই গ্রামে স্কুল বানাবো, যেন আমার মত কারও ছেলে না বলে— 'আমার বাবার হাড় ভেঙে আমরা বাঁচি, কিন্তু জানি না স্বপ্ন কী জিনিস।'"

অনেকে হাসত, কেউ বলত – "চাষার স্বপ্নে কী হয়?"
কিন্তু রফিক চাচা থামেনি। একদিন এক উন্নয়ন সংস্থার লোক এলো গ্রামে। তারা দেখতে পেল, রফিক চাচা কীভাবে অল্প জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করছে। তারা সাহায্য করল, প্রশিক্ষণ দিল, বীজ দিল।

বছর তিনেক পর, সেই রফিক চাচার জমি হলো দশ বিঘা। তিনি গ্রামের ছোট একটা স্কুলের জন্য জায়গা দিলেন, নিজের সঞ্চয় থেকে একতলা ঘর তৈরি করে দিলেন। স্কুলের নাম দিলেন – "স্বপ্ন বীজ স্কুল"।

গ্রামের শিশুরা এখন শুধু গরু-ছাগল চরায় না, বইও পড়ে। আর গ্রামের মানুষ এখন বলে,
"স্বপ্ন যদি সত্য হয়, তবে রফিক চাচার মত মানুষদের হাত ধরেই হয়।"

মন্তব্যসমূহ